মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আগ্রাসনের প্রাথমিক প্রতিরোধে তৎকালীন ইষ্ট পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে অনন্য সাধারণ নেতৃত্বেও ভূমিকা। মার্চেও উত্তাল দিনগুলোতে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৪ পদাতিক ডিভিশনের অবস্থান ছিল পূর্ব পাকিস্তানে। এ ডিভিশনের ব্রিগেডসমূহের অধীনে ৫টি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট তখন পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত ছিল। যার মধ্যে ১ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট যশোর সেনানিবাসে, ২ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট জয়দেবপুর রাজবাড়িতে, ৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সৈয়দপুর সেনানিবাসে, ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট কুমিলা সেনানিবাসে এবং ৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট চট্টগ্রামের ষোলশহর এলাকায় অবস্থান করছিল। অপারেশন সার্চ লাইটের গুপ্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী বাঙালিদের ওপর আক্রমণ হলে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টসমূহ সংঘবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে এ আশঙ্কায় নানা অজুহাতে মার্চেও শুরু থেকেই ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টসমূহকে সেনানিবাসের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিস্তারিত
মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবময় ভূমিকা রয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অধীনে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর জন্ম হয়। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে ঐতিহাসিক সেক্টর কমান্ডারদের কনফারেন্সের ঘোষনা মোতাবেক বাংলাদেশ নৌ বাহিনী আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। উলেখযোগ্য সংখ্যক বাঙ্গালী অফিসার ও নাবিকগণ পশ্চিম পাকিস্তান ত্যাগ করে দেশে এসে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী গঠন করেন। ভারত থেকে প্রাপ্ত 'পদ্মা' ও 'পলাশ' নামের ছোট দুটি গানবোট এবং ৪৯ জন নাবিক নিয়ে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী। জীবনের ঝুকি নিয়ে এ সমস্ত নাবিকগণ শত্রুর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ ও গেরিলা যুদ্ধে লিপ্ত হন। পাশাপাশি 'অপারেশন জ্যাকপট' নামে নির্ভীক ডুবুরীদল সমুদ্র ও নদী বন্দর সমূহে বিধংসী আক্রমণ পরিচালনা করেন। এতে হানাদার বাহিনীর ২৬টি জাহাজ ধ্বংস হয় ও সমুদ্র পথ কার্যতঃ অচল হয়ে পড়ে। নৌ বাহিনীর অপারেশনের মধ্যে হিরণ পয়েন্টের মাইন আক্রমণ (১০ নভেম্বর ৭১), মার্কিন ও ব্রিটিশ নৌযান ধ্বংস (১২ নভেম্বর ৭১), চালনা বন্দরে নৌ হামলা (২২ নভেম্বর ৭১), চট্টগ্রাম নৌ অভিযান (০৫ ডিসেম্বর ৭১), পাকিস্তান নৌ ঘাঁটি পিএনএস তিতুমীর অভিযান (১০ডিসেম্বর ৭১) উলেখযোগ্য। বিস্তারিত
পাকিস্তান বিমান বাহিনী ত্যাগ করে আসা বাঙালী অফিসার, ক্যাডেট ও বিমান সেনারা সেপ্টেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত স্থলযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। মোট প্রায় ৩৫ জন অফিসার ও ক্যাডেট এবং প্রায় ৫০০ বিমানসেনা পাকিস্তান পক্ষ ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। এই সব বিমান বাহিনীর সদস্যরা যদিও স্থলযুদ্ধে খুবই বিরোচিত ভূমিকা রাখছিলেন তবুও তাদের মধ্যে একটি স্বাধীন বিমান বাহিনী গঠনের চেতনা খুব প্রবল ভাবে কাজ করছিল। এই চেতনা নিয়েই কিছু সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা পাইলট ভারতীয় বিমান বাহিনী, ভারতীয় সরকার এবং বাংলাদেশ ফোর্সেস (বিডি এফ) এর সাথে বিভিন্ন রকমের আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
১৯৭১ এর সেপ্টেম্বর এর মাঝামাঝি ভারত সরকার অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারকে একটি স্বাধীন বিমান বাহিনী গঠনের জন্য আমেরিকায় তৈরী ১টি পুরানো ডিসি-৩ বিমান, কানাডার তৈরী ১টি অটার বিমান এবং ফ্রান্সের তৈরী ১টি এ্যালুয়েট-৩ হেলিকপ্টার দেয়। এর সাথে ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে একটি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরিত্যক্ত রানওয়ে ব্যবহারের অনুমতি দেয়। এই সীমিত সম্পদ নিয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়। বিস্তারিত